রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের কন্যা আতিকা আক্তার লোপা ১৩ বছর বয়সে পুরুষে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে পুরোপুরি পুরুষ হতে হলে তাকে আরো দু’টি অপারেশন করাতে হবে। অপারেশনে প্রায় ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। এতো টাকা গামেন্টে চাকরি করা তার মায়ের নেই।
লোপার ছোটবেলা থেকেই শারীরিক গঠন বৃদ্ধি পেয়ে সে একজন কিশোরী হিসেবেই বড় হতে থাকে। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে মেয়ে হিসেবে দেখে এসেছে। বর্তমানে আতিকা আক্তার লোপা কিশোরী থেকে পরিবর্তন হয়ে কিশোর হওয়ায় এখন তার নাম রাখা হয়েছে আতিকুল ইসলাম।
আতিকুল (লোপার) মামা হারুন উর রশিদ জানান, বাবার মৃত্যুর পর তাদের পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। জীবিকার তাগিদে লোপার মা লোপাকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্ট চাকরি নেন। সেখানকার একটি স্কুলেও লোপা ভর্তি হয়। সেখানে ৪র্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় লোপার কণ্ঠ ছেলেদের মতো রূপ নেয়। এ ঘটনা তার মা জানার পর থেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় মা ও মামা মিলে লোপাকে নিয়ে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে যায়। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তারা লোপাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেও বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর লোপার পুরুষ হওয়ার লক্ষ্যণের বিষয়টি চিকিৎসকরা জানান। শেষে মামা হারুন উর রশিদ লোপাকে ঢাকার শিন শিন জাপান হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বিবাশ বরন বিশ্বাস লোপার পরিবারকে বলেন, আমরা লোপার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর কয়েক সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করি। প্রথম ধাপের অপারেশন করার পর সে অনেকটা সুস্থ হয়।
তিনি আরো বলেন, তবে বাকী দুইটি অপারেশন সঠিক সময়ে করতে হবে। তাহলেই সে ছেলে হিসেবে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারবে। অপারেশন সঠিক সময়ে করতে না পারলে তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত হতে পারে।
আতিকুলের মামা মো হারুন জানায়, অসহায় পরিবার থেকে অনেক কষ্ট করে টাকা পয়সা সংগ্রহ করে গত ১৬ নভেম্বর ঢাকার উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে প্রথম অপারেশন করানো হয়েছে। তবে বাকী দুইটি অপারেশন সঠিক সময়ে করার জন্য প্রায় ৫ লাখ টাকা দরকার। ওই পরিবার থেকে এতো টাকা জোগানো সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলেই হয়তো আতিকুল সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে।
আতিকুল বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য কান্না করতাম। কিন্তু কেউ আমাকে নামাজ পড়তে নিয়ে যেতো না। আমি সব সময় একা একা ঘরে বসে আল্লাহর কাছে বলতাম আল্লাহর তুমি আমাকে ছেলে বানায়া দাও আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাব। আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ আমি মেয়ে থেকে ছেলে হয়েছি।
আতিকুলের পরিবার ও পাড়া প্রতিবেশীর দাবি, সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলেই তবেই হয়তো লোপা একজন পরিপূর্ণ ছেলে হিসেবে সমাজে চলতে পারবে।